Wellcome to National Portal
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৩ মে ২০২৫

১৩ মে ২০২৫ এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন-ইআরএফ-এর সহযোগিতায় ‘এসএমই-বান্ধব বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৫-২৬’মতবিনিময় সভা আয়োজন।


প্রকাশন তারিখ : 2025-05-13
১৩ মে ২০২৫ এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন-ইআরএফ-এর সহযোগিতায় ‘এসএমই-বান্ধব বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৫-২৬’মতবিনিময় সভা আয়োজন।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে নীতি সহায়তা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর-এর কাছে ইতোমধ্যে ১৪০টি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন মো. মুসফিকুর রহমান। তিনি আরো জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন এ যাবত শিল্পনীতি ২০১৬ ও ২০২২, এসএমই নীতিমালা ২০১৯, এসডিজি ২০৩০, অন্যান্য সরকারি নীতিমালা, কৌশলপত্র ও নির্দেশনা বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এছাড়া এসএমই-বান্ধব ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন, গবেষণা ও পলিসি অ্যাডভোকেসি, ক্লাস্টার উন্নয়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, আইসিটি সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন, নারী-উদ্যোক্তা উন্নয়ন, সহজ শর্তে অর্থায়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে ফাউন্ডেশন। এসব কার্যক্রমের সরাসরি সুবিধাভোগী প্রায় ২ লাখ এবং পরোক্ষ সুবিধাভোগী প্রায় ২০ লাখ উদ্যোক্তা। তবে ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক জরিপ- অনুসারে দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ উদ্যোক্তার তুলনায় এই হার খুবই কম। পাশাপাশি এসব উদ্যোক্তার প্রায় ৭০ ভাগ ঢাকার বাইরে। কিন্তু এসএমই ফাউন্ডেশনের ঢাকার বাইরে কোন কার্যালয় নেই। এমতাবস্থায় দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে আরো বেশি উদ্যোক্তাকে ঋণের আওতায় আনা, এসএমই নীতিমালা ২০২৫ বাস্তবায়ন এবং এসএমই খাত ও উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। সেই সাথে আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ১৩ মে ২০২৫ এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন-ইআরএফ-এর সহযোগিতায় ‘এসএমই-বান্ধব বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৫-২৬’মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন মো. মুসফিকুর রহমান। ইআরএফ-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন মো. মুসফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের উপমহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম।
মূল প্রবন্ধে এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসএমই-বান্ধব (ট্যাক্স, ভ্যাট ও ট্যারিফ সংক্রান্ত) প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৩৪টি অ্যাসোসিয়েশন এবং ৫টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে ৫টি পরামর্শ সভা এবং ১টি কর্মশালা আয়োজন করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৩০০-এর অধিক প্রস্তাব পাওয়া গেছে। তাঁদের প্রস্তাবনা পর্যালোচনাপূর্বক মূসক সংক্রান্ত ৩১টি, আয়কর সংক্রান্ত ৩৫টি এবং শুল্ক সংক্রান্ত ৬৭টি সহ প্রায় ১৪০টি প্রস্তাব চূড়ান্ত করে এনবিআর বরাবর দাখিল করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে অদ্যাবধি ৫৫৭টি প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বরাবর প্রেরণ করে এসএমই ফাউন্ডেশন, যার মধ্যে ৮৫টি প্রস্তাবনা সরকার/এনবিআর কর্তৃক আংশিক/সম্পূর্ণভাবে গৃহীত হয়েছে এবং জাতীয় বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিরও প্রাণশক্তি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাত। বাংলাদেশের জিডিপিতে এই খাতের অবদান প্রায় ৩২ শতাংশ। শিল্প খাতের কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫% সিএমএসএমই খাতে। এই খাতের বিকাশ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারি নীতিমালা, কৌশলপত্র ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসব কর্মসূচির অংশ হিসেবে এসএমই উদ্যোক্তাদের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ যাবত ১১টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা, ৯১টি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় এসএমই পণ্য মেলা, ৪টি হেরিটেজ হ্যান্ডলুম ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। চেম্বার/ট্রেডবডিসমূহের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, নারী-উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে ব্যাংকারদের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি, গবেষণা পরিচালনা, নারী-উদ্যোক্তা সম্মেলন ও ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলন, নারী-উদ্যোক্তা পণ্য মেলা আয়োজন, অনলাইন সাপ্লাইয়ার্স প্ল্যাটফর্ম এবং বিজনেস অ্যাডভাইজরি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে। সারা দেশের ১৭৭টি এসএমই ক্লাস্টার চিহ্নিত করে ক্লাস্টারভিত্তিক উদ্যোক্তাদের চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশে প্রথমবারের মতো রাজশাহীর কালুহাতি পাদুকা ক্লাস্টারে কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) প্রতিষ্ঠা করেছে ফাউন্ডেশন। এ যাবত ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১১ হাজার উদ্যোক্তার মাঝে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের জন্য আইসিটি এনাবল সেবা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ প্রদান, বিভিন্ন সফটওয়্যার সেক্টর ও আইটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যবসায়িক মেলবন্ধন তৈরি করে ফাউন্ডেশন। ‘গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস’নিশ্চিত করে পণ্যের মান উন্নীতকরণে সহায়তা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনশীলতা ও পণ্যের মানোন্নয়নে ‘কাইজেন’বাস্তবায়নেও সহায়তা করা হয়েছে। ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৩১টি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান আইএসও সনদ ২২০০০ অর্জন করেছে। এসএমই শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যবসা পরিচালনায় শিল্প সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে এসএমই-বান্ধব বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করে আসছে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এসএমই ডেভেলপমেন্ট প্রকাশ, সমসাময়িক বিষয়ের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে ফাউন্ডেশন। উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং উৎপাদনশীলতা ও পণ্যের মানোন্নয়ন, বাজার ও অর্থ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত ২টি বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টারে নতুন ও স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়।
মো. মুসফিকুর রহমান আরো বলেন, এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের অবদান বাড়ানোর লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এসএমই নীতিমালা ২০২৫ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। আমাদের আশা, ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ৩৫ শতাংশে উন্নীত করতে এবং এই নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়নে এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বাস্তবায়ন সহযোগী মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের অনুকূলে নিয়মিত অর্থ প্রয়োজন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান উন্নত দেশগুলো এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও অনেক কম। পাকিস্তানে এই হার ৪০%, শ্রীলংকায় ৫২%, চীনে ৬০%, ভারতে ৩৭%। বাংলাদেশে এই হার দেশের প্রত্যাশার তুলনায় খুবই কম। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশের সিএমএসএমই উদ্যোক্তা ৭৮ লাখ ১৩ হাজারের বেশি। জুলাই বিপ্লবের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসএমই নীতিমালা ২০২৫-কে ঘিরে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা আশা করছেন, এই নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়নে সরকার এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বাস্তবায়ন সহযোগী মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসমূহের অনুকূলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদান করবে, যা শতভাগ শ্রমঘন এই খাতকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।